গীতা নবম অধ্যায় রাজগুহ্য-যোগে ভগবান পরম গোপনীয় জ্ঞান জগত বাসীর জন্য দান করে গেলেন । এই অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যারা পাপাচারী তারা যদি তাকে ভক্তি করে তাদের গতি কি হবে । এই সমস্ত পরম ভক্তদের সমস্ত অভাব পরমেশ্বর ভগবান পূরণ করেন সেই সমস্ত বিষয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই অধ্যায়ে তুলে ধরেছেন । এই অধ্যায়ের মোট ৩৪ টি শ্লোকে ভগবান অর্জুনকে পরম গোপনীয় জ্ঞান দান করেছেন । সবশেষের শ্লোকে অর্জুনকে আবারও স্পষ্টভাবে বলেদিলেন অর্জুন তুমি আমার ইচ্ছা অনুসারে যুদ্ধ করো । আমার চিন্তায় তোমার চঞ্চল মনকে নিয়োজিত করো । ভগবান বার বার আমাদের অর্জুনের মাধ্যমে বলে দিচ্ছেন আমার ভজনা বিনে কিন্তু গতি নেই । আসুন আমরা এবার গীতা নবম অধ্যায় এর কিছু শ্লোকের ভাবার্থ দেখে নেই । যথার্থ শাস্ত্র জ্ঞানের মাধ্যমে আমরা সঠিক তথ্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আপনাদের মাঝে । Capter 9 – bhagavad gita in bangla
গীতা নবম অধ্যায় – ৩
হে অর্জুন যাহাদের আমার প্রতি শ্রদ্ধার উদয় হয়নি সেই সমস্ত ব্যক্তিরা কদাপি আমাকে লাভ করিতে পারেনা । ইহ জগতে তাহারা জন্ম মৃত্যুর চক্রে ঘুরতে থাকে ।
কৃষ্ণ ভগবান গীতার এই শ্লোকে বলেছেন ভগবানকে যারা ভক্তি না করবে তারা কখনোই ভগবানের কাছে ফিরে যেতে পারবে না । তারা যতই জাগতিক সমৃদ্ধি দেখাক না কেন ভগবানকে লাভ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় । জগতের কেউই মায়ার সাথে যুদ্ধ করে এই মায়াকেই লাভ করতে পারে না । আর কোথায় ভগবান তাকে কি করে লাভ করবে । কিন্তু একমাত্র যারা তার ভক্ত তাকে ভালোবাসে তারা অবশ্যই তাকে লাভ করিতে পারে । ভগবান প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও গীতার পরোক্ষভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছেন জগতবাসীকে তোমরা আমার ভক্ত হয় । আমার ভক্ত হলেই একমাত্র এই সংসার রূপী সাগর হইতে মুক্তি লাভ করতে পারিবে । আমাকে কেউই জয় করতে পারে না । কিন্তু যারা একমাত্র আমাতে প্রপত্তি করে আমি তাদের দাস হয়ে যাই । তারা আমার হৃদয় ।
ভগবানকে ভক্তি করেছিল অত্যন্ত গরীব বিদুর । এতটাই তিনি ভগবানকে ভালোবাসতো যা কৃষ্ণ বিনা আর কেউ জানত না । একবার দুর্যোধন বিদুরকে নিমন্ত্রণ করলো । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দুর্যোধনের রাজগৃহে গেলেন । অনেক খারাপ প্রস্তুত করেছেন দুর্যোধন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য । কিন্তু কৃষ্ণ সেই খাবারের চারপাশে পিছনে হাত দিয়ে ঘুরছেন আর দর্শন করছেন । দুর্যোধন কৃষ্ণ ভগবান কে বলছেন দেখেছ কৃষ্ণ অনেক কিছু প্রস্তুত করেছি । কোন কিছুতে কমতি নেই । কৃষ্ণ ভগবান তখন দুর্যোধনকে বলল তোমার একটা বিষয় এখানে কম আছে তা হলো ভক্তি । আর যেখানে ভক্তি থাকে না আমি সেখানে কোন সেবা গ্রহণ করি না । তাই পরম দয়ালু কৃষ্ণ ভগবান দুর্যোধনের রাজগৃহ হতে বেরিয়ে অত্যন্ত গরীব বিদুরের গৃহে গেলেন । বিদুরের স্ত্রী ভগবানকে দেখে তার অপ্রাকৃত রূপ দর্শন করে কলা দিতে গিয়ে কলার খোসা দিলেন আর ভগাবন কৃষ্ণ সেই কলার খোসা খেয়েছিলেন । ভগবানকে যারা ভালোবাসে তারা যা কিছু দান করুক না কেন তাই তিনি গ্রহণ করেন । কিন্তু তাকে যারা ভক্তি করেন না । তারা অনেক রাজসিক ভাবেও তার সেবা করেন তাহলেও ভগবান তা গ্রহণ করেন না এটাই ভগাবন শ্রীকৃষ্ণ গীতার নবম অধ্যায় এর এই শ্লোকে বললেন । gita in bangla
Read More: গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ধ্যানযোগের সারাংশ
গীতা নবম অধ্যায় – ১১
পৃথিবীতে আমি যখন অবতীর্ণ হই তখন মূর্খ মানুষেরা আমার স্বরূপকে উপলব্ধি করতে পারে না । তারা আমাকে সব কিছুর পরম কারন বলে জানে না এবং আমাকে অবজ্ঞা করে ।
অনেক মানুষ রয়েছে যারা ভগবানের অবতার কে স্বীকার করে না । তারা বলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ একজন সাধারণ ব্যক্তি, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু মনুষ্য, রাম তো ভগবানই নয় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কথা শ্রীমদ্ভগবদ গীতার এই শ্লোকে বললেন । আমি যে ভগবান তারা স্বীকার করে না । এভাবে তারা আমাকে অবজ্ঞা করে আমার চরণে অপরাধ করে । ভগবান কৃষ্ণের অবতারকে স্বীকার না করার মতো মানুষ রূপী অসুর বৈদিক যুগেও ছিল । তারা স্বীকার করতো না যে ভগবান অবতার রূপ ধারণ করে এই পৃথিবীতে এসেছেন । তার মধ্যে ছিল রাবণ, কংস, হিরণ্যকশিপু আদি অসুরেরা ভগবান কে স্বীকার করতো না । যার কারনেও তারা তাদের জীবনে কখনো শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারেনি । আর এই ধরনের ব্যক্তিরা যে কেবল এই জগতেই সুখে থাকতে পারে না এমন নয় পরকালেও তারা কখনো শান্তি লাভ করতে পারেন না । সে জন্য শাস্ত্রে বলা হয়েছে কেহ মানুক অথবা না মানুষ সবাই আমার ভৃত্য । আর যে আমাকে না মনবে সেই পাপেই তাহার বিনাশ হবে ।
গীতা নবম অধ্যায় – ১৪
মহাত্ম্যাগন যত্নশীল এবং দৃঢ়ব্রত হয়ে সব সময় আমার নাম গুনাগুণ কীর্তন করেন । এইভাবে তারা আমাকেই প্রণাম করে আমার সেবা করে সর্বদা ।
গীতার নবম অধ্যায়ের এই শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে সাধুগন তাহার উপাসনায় দিন অতিবাহিত করেন । যারা প্রকৃতই ভগবানের ভক্ত তারা কখনো বৃথা কাজে তার সময় ব্যয় করেন না । সেখানেই ভক্তরা থাকুক না কেন সব সময় তারা ভগবানের সেবা করেন । ভক্ত কখনো ভগবানের নাম কীর্তন করেন, আবার কখনো প্রসাদ সেবা করেন, কখনো কৃষ্ণ কথা শ্রবণ করেন, আবার কখনো মন্দির মার্জনা করেন । এভাবেই নানা কার্যের মাধ্যমে তারা ভগবানের সেবায় ব্যস্ত থাকেন । আর এই যে ভগবানের সেবা রূপী কার্য এই কার্যই হলো প্রকৃত কর্ম । যা আমাদের জড় জগতের বন্ধন হইতে মুক্ত করে থাকে । এজন্য ভক্তরা সর্বদা নববিধা ভক্তির মাধ্যমে তাহার উপাসনা করে থাকেন । gita in bangla
Read More: গীতার প্রথম অধ্যায় বিষাদ যোগের সারাংশ
গীতা নবম অধ্যায় – ২২
আমার যে ভক্ত সর্বদা আমার চিন্তা করেন এবং আমার সেবা করেন । আমি আমার সেই পরম ভক্তের অপূর্ণ বস্তু দান করি এবং বহন করি ।
সমস্ত গীতার নবম অধ্যায়ের এই শ্লোকটি বিশেষ একটি ঐতিহাসিক কাহিনী বহন করে আসছে । ভগবানের এক ভক্ত ছিল তার নাম ছিল অর্জুন মিশ্র । সে প্রত্যহ সম্পূর্ণ গীতা পাঠ করতো । সে গীতার নবম অধ্যায়ের এই শ্লোকটি পাঠ করে মনে মনে ভাবলেন এ হয় ভগবান ভক্তের বোঝা বহন করেন না । তিনি ভক্তের অভাবকে পূরণ করেন । তাই তিনি লাল করমের দাগ দিলেন এই শ্লোকের উপর এবং নতুন করে ভাবার্থ লিখলেন ।
একবার তার রাজ্যে চারদিন পর্যন্ত প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে । অর্জুন মিশ্র প্রতিদিন ভিক্ষা বৃত্তি করে জীবন ধারণ করতো । ফলে চার দিন প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় ঘরে আর কিছুই না থাকার বৃষ্টি থামলে তিনি ভিক্ষার জন্য বেরিয়ে পরেন । তার সন্তানেরা সবাই ক্ষুধার জন্য কান্না করতেছেন । অর্জুন মিশ্র ভিক্ষার জন্য বেরোলে সেই সময় দুইটা সুন্দর দেখতে শিশু সন্তান বড় বড় দুইটা বস্তায় চাল ডাল নিয়ে এসে অর্জুন মিশ্রের স্ত্রীকে দিলেন এবং বললেন অর্জুন মিশ্র পাঠিয়েছে । একটি ছেলের গায়ের রং ছিল শ্বেত বর্ণ এবং আরেক জনের গায়ের রং ছিল কৃষ্ণ বর্ণ । অর্জুন মিশ্রের ছেলে দুজন যাওয়ার আগে বলে গেলেন আপনার স্বামী আমাদের দেখুন কি করেছে পিঠে । আমাদের দুজনকে চাবুকের আঘাত করেছে আমরা ঠিক ভাবে বোঝা বইতে পারি না জন্য । তখন অর্জুন মিশ্রের স্ত্রী তাদের সেই চাবুকের আঘাত দেখে দুঃখিত হলো এবং তাদের সেবা করে বিদায় দিল । অর্জুন মিশ্র বাড়িতে এসে সমস্ত ঘটনা শুনে অবাক হন । কারন তিনি কোন চাল ডাল কিছুই পাঠায়নি । তখন তিনি বুঝতে পারলেন গীতার শ্লোকে লাল কলমের দাগ দেওয়া তার অপরাধ হয়েছে । আসলে গীতার প্রতিটা শ্লোক স্বয়ং ভগবানের দিব্য শরীরের অংশ স্বরূপ । bhagavad gita in bangla
গীতা নবম অধ্যায় – ৩০
পাপাচারী ব্যক্তিও যদি একবার আমার চরণে স্মরণ গ্রহণ করে এবং আমার ভজনা করে । তাহলে তাকেও সাধু বলে সম্মান করবে । কারন সে পরম কর্ম স্বরূপ আমার উপাসনা করেন ।
Read More: বিজ্ঞান যোগ নামক গীতার সপ্তম অধ্যায়ের সারাংশ
শেয়ার করুন
Post Tags:
গীতা নবম অধ্যায়, ভাগবত গীতা, bhagavad gita, বাংলা গীতা পাঠ, গীতা ৯ম অধ্যায়, শ্রীমদ্ভাগবত গীতা, gita in bangla, ভগবত গীতা পাঠ, bhagavad gita bangla, গীতার নবম অধ্যায়