গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় মূলত ধ্যান যোগের কথ বলা হইয়াছে । যদিও কলিযুগে ধ্যানের মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করা খুবই কষ্টসাধ্য । যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন । কিন্তু পরেও কোন কালেই ধ্যানের গুরুত্ব কমবে না । ধ্যানযোগের গুরুত্ব ছিল আছে এবং থাকবে । কারন মনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মন্ত্র এর পরে ধ্যানযোগই দ্বিতীয় মাধ্যম যার মাধ্যমে চঞ্চল মনকে সংযত করা যায় । কিভাবে সেই ধ্যানযোগ অনুশীলন করেন যোগী গন সেই বিষয়েই অর্জুনের কাছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতার এই ষষ্ঠ অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন । আমরা এই পোষ্টে ষষ্ঠ অধ্যায়ের কিছু মূল শ্লোকের ভাবার্থ ক্যাপশন আকারে অধ্যয়ন করবো । যার মাধ্যমে আমরা সম্পূর্ণ অধ্যায়ের একটা ভালো ধারণ আপনার পাবেন আশা করি । ধ্যানযোগ যে কেবল মাত্র মনকে নিয়ন্ত্রণ করে তা নয় । বৈদিক যুগ হতেই ধ্যানের চর্চা মানুষ করে আসছে রোগ হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য । প্রায় এমন কোন রোগ নেই যা ধ্যানের মাধ্যমে ভালো হয় না । যদি ধ্যানযোগ কে শরীরের জন্য ব্যবহার করা ঠিক নয় । কিন্তু কখনো কখনো ধ্যান মানবের আরোগ্য লাভের জন্য অনেক উপকারী হয়ে ওঠে । এবার আমরা গীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ের ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কিছু বিশেষ বাণী দেখে নেই । Capter six – srimad bhagavad gita
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ১ শ্লোক
বৈদিক কর্ম পরিত্যাগ করে যিনি যোগী অথবা সন্ন্যাসী হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি প্রকৃতপক্ষে যোগী নয় । ইহজগতের কর্মের ফল এর আসা না করিয়া যে ব্যক্তি তার কর্তব্য কর্মের অনুষ্ঠান করিয়া থাকেন তিনিই হলেন প্রকৃত যোগী ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ২ শ্লোক
এই জগতকে যতদিন পর্যন্ত ভোগের বাসনা কেউ ত্যাগ করিতে না পারবে ততদিনে সে কখনোই যোগী হইতে পারবে না ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৩ শ্লোক
যারা নতুন যোগ অনুশীলন করিতে ইচ্ছা করেন তাদের কর্ম করা উচিত । কারন এই যুগে কর্মের মাধ্যমেই আমাকে লাভ করার উৎকৃষ্ট মাধ্যম ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৪ শ্লোক
তাকেই যোগরূপ বলা হয় যখন যোগী তাহার বিষয় ভোগের বাসনা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করিয়া একমাত্র যোগে অবস্থিত হয়েছেন ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৬ শ্লোক
আপন মনকে যিনি জয় করিতে পারিয়াছেন । তাহার কাছে মন পরম বন্ধুর মতো । কিন্তু যে ব্যক্তি মনকে জয় করতে পারেননি তাহার কাছে মন চির শত্রু স্বরূপ ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৭ শ্লোক
যে ব্যক্তি যোগে মনকে অধিষ্ঠিত করেছেন তাহার কাছে দুঃখ-সুখ, উষ্ণ-শীত, মান-অপমান সব কিছুই সমান ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৯ শ্লোক
শত্রু, মিত্র, বন্ধু, উদাসীন, মৎসর, সুহৃদ, ধার্মিক, পাপাচারী, সধ্যস্থ সকল মানুষের প্রতি যার সামান দর্শন তিনিই জগতে শ্রেষ্ঠ ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ১৫ শ্লোক
এভাবেই যোগী তার জড় ইন্দ্রিয়, মন দেহ কার্যকলাপ সংযত করার মাধ্যমে আমার দিব্য লোক প্রাপ্ত হন । bhagavad gita bangla
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ১৬ শ্লোক
যিনি অধিক আহার করেন, অধিক নিদ্রাযান, আবার অনাহার করেন, কখনো বা আবার নিদ্রশূন্য এই ধরনের ব্যক্তিরা কখনো যোগী হইতে পারেন না ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ১৭ শ্লোক
যাহার জীবন নিয়মে ছন্দে ছন্দায়িত । পরিমিত প্রয়াস, পরিমিত বিহার, পরিমিত আহার করেন এবং যাহার জাগরণ ও নিদ্রা নিয়মিত সেই ব্যক্তি যোগ সাধনার মাধ্যমে সমস্ত দুঃখ হইতে মুক্তি লাভ করিতে পারেন ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ১৯ শ্লোক
ঠিক যেরূপ বায়ুহীন স্থানে কখনো দীপের শিখা কম্পমান হইবে না, তদ্রূপ প্রকৃত যোগীর মনও ভগবানের চরণে অবিচল থাকে । কোথাও বিক্ষিপ্ত হয় না ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ২৬ শ্লোক
চঞ্চল অবুঝ মনটা যেসকল বিষয়ের প্রতি ধাবিত হয় । সেই সমস্ত বিষয় হইতে আপন মনকে কচ্ছপের হস্ত পদের মতো গুটিয়ে লইতে হইবে ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ২৭ শ্লোক
সেই ব্যক্তিই পরম সুখ প্রাপ্ত হন যিনি রজোগুণ হইতে মনকে প্রশমিত করিতে পারিয়াছেন, প্রশান্ত যার চিত্ত এবং ব্রহ্মভাব যিনি প্রাপ্ত হয়েছেন ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ২৯ শ্লোক
যোগের চরম সিদ্ধির স্তর হলো সিদ্ধ যোগী সর্বত্রই কেবলমাত্র আমাকেই দর্শন করবেন । সে যেখানেই থাকুক না কেন সর্ব অবস্থাতেই তাহার মন আমার চিন্তায় মগ্ন থাকিবে ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৩২ শ্লোক
তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ যোগী যিনি অপরের দুঃখ এবং সুখকে নিজের সুখ দুঃখ রূপে দর্শন করেন । srimad bhagavad gita
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৪০ শ্লোক
যারা ধর্মের অনুষ্ঠান করেন তাহাদের সেই ধর্ম কার্য কখনো বৃথা হয় না । তাহারা জীবনের কখনো অধোগতি লাভ করেন না ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৪২ শ্লোক
যদি কোন ব্যক্তি ইহ জন্মে যোগ করিতে গিয়ে ভ্রষ্টও হইয়া যায় তথাপি সে পরবর্তী জন্মে আবার সদাচারী কোন ব্রাহ্মণের গৃহে জন্মগ্রহন করেন এবং আমাকে ভজনা করার সুযোগ লাভ করেন ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৪৬ শ্লোক
জ্ঞানী এবং সকাম কর্মী হইতেও যোগীগন শ্রেষ্ঠ । সুতরাং হে অর্জুন তুমি সর্ব অবস্থাতেই প্রয়াস করো যোগী হওয়ার জন্য ।
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায় ৪৭ শ্লোক
আবার যে যোগীগন একমাত্র আমার ভজনা করেন । আমার মতে সেই যোগীগনই জগতের শ্রেষ্ঠযোগী । gita in bangla
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যোগ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ দিলেন গীতার এই অধ্যায়ে । কিভাবে যোগ অনুশীলন করে যোগীরা, আমার তাদের মধ্যে কোন যোগী শ্রেষ্ঠ তাহাও ভগবান বলে দিলেন । একমাত্র ভক্তি যোগীরাই শ্রেষ্ঠ এটা সমস্ত শাস্ত্রে বলে গিয়েছে । ভগবানকে যদি কোন ব্যক্তি লাভ করিতে প্রয়াস করেন তাহলে ভক্তিই একমাত্র শ্রেষ্ঠ পথ যার মাধ্যমে ভগবানকে আপন করে লাভ করা যায় ।
Read More: গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের মূল শ্লোকার্থ
শেয়ার করুন
Post Tags:
গীতা ষষ্ঠ অধ্যায়, গীতা পাঠ বাংলা, gita in bangla, গীতার ষষ্ঠ অধ্যায়, bhagavad gita bangla, গীতার ৬য় অধ্যায়, ভাগবত গীতা, gita in bengali