শ্রীমদ্ভগবদ গীতা প্রথম অধ্যায় এর নাম বিষাদ যোগ । অর্জুনের বিষাদের কারনেই আজকে আমর শ্রীমদ্ভগবদ গীতা জ্ঞান লাভ করিতে পারছি । যদি অর্জুনের মনে বিষাদই না আসত তাহলে সে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলতেন না পে প্রভু যুদ্ধের পূর্বে একটু আমাদের রথটা এই মহামাঠের মধ্যে স্থাপন করো । আমি সকলকে একটু দর্শন করিতে বাসনা করি । তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের কথা তাহাদের রথটা সবার মধ্যখানে স্থাপন করেছিল । যখন অর্জুন তার আত্মীয় স্বজনদের যুদ্ধে প্রবৃত্ত হতে দেখেছিলেন । তখন তাহার হৃদয়ে শোক নেমে এলো । তখন অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জ্ঞানের কথা বলতে লাগলো । হে প্রভু আমি এই আপন স্বজন ধ্বংসে প্রবৃত্ত হব না । তাহার থেকে শ্রেয় হবে আমি দুর্যোধনকে রাজ্য দিয়ে দিব । আপন ভাইদের হত্যা করে রাজ্য সুখ ভোগ করার থেকে তাদের রাজ্য ছেড়ে দেওয়াই ভালো ।
এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্জুন কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে খুবই যুক্তিসংগত কথা বলেছিল । তিনি শ্রীকৃষ্ণকে যুক্তি দেখিয়েছিল প্রভু যদি এই যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থিত সমস্ত সৈন্যরা নিহত হয় তাহা হইলে । তাদের স্ত্রীগন দুষ্টা হয়ে যাবে আর যদি স্ত্রীগন দুষ্টা হয় তাহা হইলে সমাজে দুষ্ট সন্তান বৃদ্ধি পাবে । আর দুষ্ট সন্তান যদি বৃদ্ধি পায় সমাজে তাহলে উৎপাতের সৃষ্টি হবে তাদের দ্বারা । এতে করে সমাজেরই অকল্যাণ । অতএব হে প্রভু আমি এক কি করিব তাহা ভাবিয়া পাইতেছি না । এইজন্য আমি সিদ্ধান্ত করেছি যে এই মহাযুদ্ধ আমি করিব না । এবার আমরা গীতা প্রথম অধ্যায় এর কিছু বিশেষ শ্লোকের অর্থ জেনে নেই । gita in bangla Capter 1
গীতা প্রথম অধ্যায় – ১ শ্লোক
এই শ্লোকে রাজা ধৃতরাষ্ট্রের মনোভাব স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে । তিনি তে তার আপন ভাইয়ের পুত্রদের পর করে দিয়েছেন । তার গীতার প্রথম অধ্যায়ের প্রথম শ্লোকের মাধ্যমে বোঝা যায় । তার ধর্ম ছিল পাণ্ডু দেহত্যাগ করার পরে তার সন্তানদের নিজের পুত্রের মতো পালন করা । কিন্তু তিনি তা করেননি । ধৃতরাষ্ট্র নিজের পুত্রদেরই আপন করে দেখেছেন । যার শেষ পরিণাম আজকের যুদ্ধ । যদি ধৃতরাষ্ট্র চাইত যে এই মহাযুদ্ধ বন্ধ হোক তাহলে এই মাহবিধ্বংস হতো না । কিন্তু স্বার্থপর ধৃতরাষ্ট্র তা করেননি । কৃষ্ণ, বিদুর, পিতামহ ভীষ্ম, গুরু দ্রোণাচার্য তারা বারং বারং বার ধৃতরাষ্ট্রকে বোঝানোর পরেও ধৃতরাষ্ট্র কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করেননি । তাই যেমন কর্ম তেমন ফল এমনটাই প্রকৃতির নিয়ম । লোভের কারণেই সেই মহারক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধে পাণ্ডুর পুত্র নয় বরং রাজা ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রগনই বধ হয়েছিল । এই জন্যই তো শাস্ত্রে বলা হয়েছে লোভে পাপ এবং পাপেই মৃত্যু । একশত পুত্রের কোন পুত্রই বাকী ছিল না । বাবার পিণ্ডদান করার জন্য ।
সবথেকে লজ্জার বিষয় হলো যখন যুধিষ্ঠির মহারাজ হয়েছিল তখন ধৃতরাষ্ট্রকে খাবার দিয়েছিল তিনি যাদের হত্যার এত পরিকল্পনা করেছিল তাদের একজন ভীমসেন । আসলেই যা খুবই লজ্জার বিষয় । তাই একদিন রাতে বিদুর ধৃতরাষ্ট্রকে বোঝালে আরে মূর্খ ধৃতরাষ্ট্র এত হত্যার পরিকল্পনা করলে আর আজকে তারাই তোমাকে খাবার দিচ্ছে । তোমার কি একটুর বিবেকে দংশন করে না । যদি জীবনের কল্যাণ সাধন করিতে চাও তাহলে পরমার্থ সাধনের জন্য চলো । আর সেই রাতেই ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারীকে নিয়ে বনে তপস্যার জন্য চিরবিদায় নিয়েছিলেন । bangla gita Capter 1
গীতা প্রথম অধ্যায় – ৯ শ্লোক
গীতার এই নবম শ্লোকে আবার দুর্যোধন তার শক্তি মত্তার প্রদর্শন করিতেছেন । নিজের কোন শক্তি নেই কিন্তু এখানে সে তার গুরু, পিতামহ আদি সৈন্যদের কথা বলিতেছেন । যাতে তারা আরো দুর্যোধনের দলে যুদ্ধ করার জন্য আগ্রহ করে । যদিও সমস্ত সেনাদের শক্তিবলের অধিকারী রাজা । কিন্তু এখানে দুর্যোধন রাজা নয় । সে মহারথীদের ছল করে তার দলে রেখে দিয়েছেন । আসলে দুর্যোধনের দোষ ছিল না । দোষ ছিল তার সঙ্গের । তিনি যদি তার মামা শকুনির সঙ্গ না করতো তাহলে । তাহলে এই মহা ধ্বংসই হতো না ।
এজন্য কোন ব্যক্তি যদি ভালোও হয় এবং সে যদি খারাপের সঙ্গ করে তাহলে সে খারাপ হবেই । কারন যেমন সঙ্গ তেমন চেতনা লাভ হয় আমাদের । রাম লীলায় দেখা যায় মা কৈকেয়ী রামকে অধিক ভালোবাসতো । নিজের সন্তান ভরতের থেকেও বেশি ভালোবাসতো । যখন মা কৈকেয়ী শুনতে পারলেন যে তার রামচন্দ্র রাজা হবে তখন তিনি আনন্দে সবাই মিষ্টি খাওয়ালেন । কিন্তু যখন সেই কথা তার দাসী মন্থরা শুনতে পেলেন । তখন তিনি মাতা কৈকেয়ীকে কুপরামর্শ দিয়ে নানান লোভ দেখিয়ে তার আদরের রামকে বনবাসে দিয়েছিলেন । যে কথা আমরা সবাই জানি । এই জন্যই বলা হয় তুমি কেমন সেটা বড় ব্যাপার নয় খারাপ হওয়ার জন্য । ব্যপার হলো তুমি কার সঙ্গ করছো । gita in bangla Capter 1
Read More: গীতার তৃতীয় অধ্যায় এর মূল সংক্ষেপে
গীতা প্রথম অধ্যায় – ১৯ শ্লোক
মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রকে সঞ্জয় বলিলেন – হে রাজন অর্জুন এবং ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্য শঙ্খধ্বনি শ্রবণ করিয়া আপনার পুত্রদের হৃদয় যেন বিদীর্ণ হতে লাগলো । এই শ্লোকে সঞ্জয় তিনি যে সত্যের পক্ষে তার পরিচয় দিয়েছেন । কারন তিনি যদি দুর্যোধনের পক্ষে হতেন তাহলে তিনি কখনোই ধৃতরাষ্ট্রের মনে ভয়ের উদয় হয় এমন কথা বলিতেন না । কিন্তু তিনি এই কথাটিই বলিলেন হে প্রভু ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দিব্য শঙ্খধ্বনি শ্রবণ করিয়া আপনার পুত্রগন যেন ভাবতে লাগলো তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত । এটা জানার পরেও আপনার পুত্রগন এই মহাযুদ্ধ হতে নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন না । এটাই সবথেকে বড় মুর্খামি আপনার দুষ্ট পুত্রগনের । এই জগতের কার সাধ্য আছে যিনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিপক্ষে যুদ্ধ করে । আহা কি আশ্চর্যের বিষয় আপনার পুত্রগন সেই বিষয়টা বুঝতেই পারতেছেন না ।
যে ব্যক্তি ভগবানের মতো প্রিয় বান্ধবকে শত্রু-ভাবে তার থেকে নরাধম এই জগতে নেই । তিনি এই সমগ্র জগতেরই শত্রু । ঠিক যেমন দুর্যোধন, রাবণ, কংস আদি ছিলেন । তাই ভগবান হলেন এমন ব্যক্তি জগতের কেউ আপনার পাশে না থাকিলেও সে থাকবেন । আপনি হাজারো বার তাকে তিরস্কার করলেও তিনি কিন্তু আপনার পরম বন্ধরূপে আপনার পাশে থাকবেন । যা সমস্ত শাস্ত্রেই বলা হয়েছে । অতএব আমাদের সকলের পরম কর্তব্য সেই পরম বন্ধুটির জন্য দিনে কিছু সময় হলেও বার করা । যাতে করে নীরবে নিভৃত্তে সেই পরম প্রভুকে সময়ে দেওয়া যায় তার আরাধনা করার মাধ্যমে ।
জয় শ্রীমদ্ভগবদ গীতা । bangla gita Capter 1
Read More: গীতার বিজ্ঞান যোগ অধ্যায়কে জানুন সংক্ষেপে
শেয়ার করুন
Post Tags:
গীতা পাঠ, গীতা প্রথম অধ্যায়, gita in bangla, শ্রীমদ্ভগবদ গীতা, bangla gita Capter 1, গীতা ১ম অধ্যায়, bhagavad gita bangla, গীতার প্রথম অধ্যায়, প্রথম অধ্যায় গীতা