স্বর্ণমন্দির, বান্দরবান । বুদ্ধদেবের আকর্ষণীয় মূর্তি রয়েছে এই স্বর্ণমন্দিরে

স্বর্ণমন্দির – যারা প্রকৃতিপ্রেমী তারা সর্বদাই চায় প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকতে। এরূপ প্রকৃতি মায়া রূপ ধরে প্রেমের স্নেহ মাখা হাসি, প্রেম মাখা বল, শোভিত রুপ ও প্রকৃত প্রেম দানের স্থান হচ্ছে বান্দরবান। যেটি কিনা ভ্রমণ পিয়াসিদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় ও নান্দনিক প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। কিন্তু তারই মধ্যে ছাপ খাইয়ে এগিয়ে রয়েছে বান্দরবানে অবস্থিত পাহারাদার প্রকৃতির মাঝে স্বর্ণমন্দিরটি। এটি মহাসুখ মন্দির আবার বুদ্ধ ধাতু জাদি মন্দির নামে বহুল পরিচিত লাভ করেছে পর্যটকদের কাছে। যেটি কিনা বান্দরবানের বিশেষ বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে অন্যতম।

এই মন্দিরে রয়েছে বুদ্ধদেবের আকর্ষণীয় মূর্তি যেটি কিনা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মূর্তি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে । সমসাময়িককালে নির্মিত এই বুদ্ধমূর্তিটি পরবর্তীতে এই স্বর্ণমন্দিরে আনায়ন করা হয়। স্বর্ণ মন্দিরের বুদ্ধমূর্তিটি নির্মাণ করতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এই মন্দিরটির নাম স্বর্ণ মন্দির হওয়ার পেছনে রয়েছে বিশেষ মাহাত্ম্য।

স্বর্ণমন্দির এর বর্ণনা

অনেকে হয়তো ভাবতে পারে এটি সত্যি স্বর্ণ দ্বারা আবিষ্ট স্বর্ণমন্দির। তা কিন্তু নয়। বিশেষত এই মন্দিরটির রং হল স্বর্ণালী। এই স্বর্ণালী রঙের উপর ভিত্তি করেই এই মন্দিরের নাম রাখা হয় স্বর্ণমন্দির। বান্দরবান, রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি এই ৩টি পার্বত্য জেলায় মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বেশীরভাগ সময়ই দেখা যায়। স্বর্ণমন্দির টি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বিশেষ ক্ষেত্র। তাদের মতে এটি একটি পবিত্র স্থান হিসেবে দখল করে নিয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। দূরদূরান্ত থেকে এমনকি দেশের বাইরে থেকেও, যেমনঃ থাইল্যান্ড, মায়ানমার সহ ইতালি দেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পর্যটকেরা বান্দরবানে অবস্থিত স্বর্ণমন্দির প্রতিবছরই কমবেশি ভ্রমণ করতে আসেন। এ মন্দিরটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের উপসনালয়।

বান্দরবান জেলা শহর থেকে ৯মিটার দূরে স্বর্ণমন্দির অবস্থিত। যেটি কিনা বালাঘাটা অঞ্চলের সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ায়। বাংলাদেশের বান্দরবানে অবস্থিত স্বর্ণমন্দির টি সেখানের উপজাতি মারমাদের প্রার্থনা করার জন্যই তৈরি করা হয়েছিল।

ইতিহাসিক স্বর্ণমন্দির

ইতিহাসবিদদের মতে মন্দিরের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে এবং শেষ ২০০৪ সালে। স্বর্ণমন্দির দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম বৌদ্ধমন্দির। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের দক্ষ কারিগর দ্বারা নির্মাণ করা হয় স্বর্ণমন্দির টি। অনেকের ধারণা মন্দিরের ভিতরে স্থাপিত বুদ্ধমূর্তিটি হয়তো পিতলের। কিন্তু না। এটি সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। যা মন্দিরের এক অন্যতম আকর্ষণ। মন্দিরের কারুকার্য দেখে আপনার মনে হবে স্বর্গকে এখানে স্থাপন করা হয়েছে। যা পর্যটকদের কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত এবং যা ভুলার নয়।

বান্দরবানের মধ্যে এটি সবচেয়ে আকর্ষণীয় মন্দির।শুধু বান্দরবান বললে ভুল হবে পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই মন্দিরটি দৃষ্টিনন্দন। মন্দিরটি সৌন্দর্য যেন প্রকৃতিরা পাহারা দিচ্ছে। সাধারণত এ মন্দিরে ১২টি বুদ্ধ মূর্তি রয়েছে। তাও আবার বাহিরে। এই বুদ্ধ মূর্তি গুলো মন্দিরের সৌন্দর্য্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এ মন্দিরের শিক্ষার ছাপ রয়েছে। কারন প্রত্যেকটি মসজিদে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার এক অনন্য প্রতীক।

স্বর্ণমন্দিরের উচ্চতা

এ মন্দিরে পর্যটকের বেশি ভিড় হয় বুদ্ধ পূর্ণিমায়। এ পূর্ণিমায় বুদ্ধদেবকে স্মরণ করতে হাজারের মতো ধর্মাবলম্বীদের আগমন লক্ষ করা যায়। এ সময় তারা বিশেষ প্রস্তুতিতে বানানো হাজারো মাটির প্রদীপ প্রজ্জোলন করেন। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে বান্দরবানে অবস্থিত এ স্বর্ণমন্দির টি ১৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। বুদ্ধদেবের প্রতি অগাধ বিশ্বাস থাকায় তারা এই ১৬০০ ফুট উঁচুতে উঠতেও দ্বিধা বোধ করে না। এই উচ্চতা কে অতিক্রম করেই তারা স্বর্ণমন্দির অর্থাৎ বুদ্ধদেবের মূর্তি দর্শন করতে যায়।

স্বর্ণমন্দিরে শুধু যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরই আগমন ঘটে তা কিন্তু নয়। এখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সকলেই ভ্রমন করতে আসে। যতদিন গড়াচ্ছে এখানে পর্যটকদের সংখ্যা তত বাড়ছে। ভ্রমণপিয়াসীদের কথা মাথায় রেখেই প্রতিবছর এখানে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হয়। স্বর্ণমন্দিরে অবস্থিত মূর্তিটি মায়ানমারের বার্মার স্থাপত্যবিদ এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয়েছে। এ মূর্তিটির পিছনে আকর্ষণের এটাই মুল কারন🤗।

বান্দরবানের এই স্বর্ণমন্দির টি ভ্রমণ করতে আসলে একসাথে দুইটি কাজ করার মত হয়ে যায়। ভ্রমণপিয়াসীরা একদিকে স্বর্ণমন্দির টিও দর্শন করতে পারবে। অন্যদিকে প্রকৃতির প্রেমও উপভোগ করতে পারবে। ওখানে যাওয়ার জন্য যাতায়াত ব্যবস্থা আগের থেকে শতগুণে ভালো করা হয়েছে। যাতে ভ্রমণপিয়াসীদের ভুগতে না হয়। মন্দিরের পাশেই আপনি একটি পুকুর দেখতে পাবেন যার নাম রাখা হয়েছে দেবতাপুকুর। যার অবস্থান ৩০০ ফুট উচ্চতায়।

প্রকৃতি যে কতটা সুন্দর তা আপনি এখানে না গেলে বুঝতে পারবেন না। হত এটি একটি ধর্মীয় তীর্থস্থান তাই সেখানে কোন ধরনের অশ্লীল আচরণ বা পোশাক পরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ মন্দিরে কিছু আইনকানুন প্রশাসন কর্তৃক চালু রয়েছে যা আপনাকে মেনে চলতে হবে

স্বর্ণমন্দিরে থাকা খাওয়া

অনেকেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের এই তীর্থস্থানটিকে দর্শনীয় স্থান বলে মন্তব্য করেন। যার কারনে ২০১৬ সালে দীর্ঘদিন যাবৎ এ মন্দিরটি বন্ধ করে রেখেছিলেন।আপনি মাত্র ২০ টাকা প্রবেশ ফি জমা দিয়েই মন্দির দর্শন করতে পারবেন।মন্দিরটি সবসময় খোলা থাকে না। এটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সন্ধ্যা ৬টার পর মন্দির দর্শন করতে কাউকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। বাংলাদেশের যে প্রান্তেই থাকুন না কেনো আপনাদের সরাসরি স্বর্ণ মন্দির দর্শন করতে হলে বান্দরবানে আসতে হবে। ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে বান্দরবানে একটি সুপরিচিত জায়গা হয়ে উঠেছে। তাই সেখানে থাকা খাওয়া নিয়ে নেই কোনো ঝামেলা। মাত্র ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকার মধ্যে যেকোনো ধরনের সেবা পেতে সক্ষম হবেন আপনি।

শেয়ার করুন

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Post Tags:

স্বর্ণমন্দির, স্বর্ণমন্দির বান্দরবান, স্বর্ণমন্দির এর বর্ণনা , স্বর্ণমন্দিরে থাকা খাওয়া, স্বর্ণমন্দিরের উচ্চতা, ইতিহাসিক স্বর্ণমন্দির

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!