গীতা পঞ্চদশ অধ্যায় এ এই জগতকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিম্নমুখী একটি বৃক্ষের সাথে তুলনা করেছেন । এই বৃক্ষকে যদি দর্শন করা যায় না । জ্ঞান রূপী চক্ষুর দ্বারাই কেবল এই অদ্ভুত বৃক্ষকে দর্শন করা যায় । নিম্নমুখী উক্ত বৃক্ষের পত্র গুলো হচ্ছে জীবের ইন্দ্রিয় । কোন নিম্ন শাখায় রয়েছে অধোলোক গুলো । আর উপরের শাখা হচ্ছে উন্নত লোক সমূহ । এর সর্বোচ্চ শিকর হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম । গীতার ১৫ অধ্যায় এ ভগবান তাঁর দিব্য লোক এবং এই জগতের সাথে তুলনা করেছেন । আমাদের এই জগতে জন্ম, জরা, মৃত্যু এবং ব্যধি রয়েছে । সূর্যকে দরকার হয় এই পৃথিবীকে আলোকিত করার জন্য । কিন্তু ভগবানের চিন্ময় লোক অথবা বৈকুণ্ঠকে আলোকিত করার জন্য চন্দ্র সূর্যের প্রয়োজন পরে না । সেখানে ভগবানের দিব্য শরীর হইতে যে রশ্মি নির্গত হইয়া থাকে সেই কোটি সূর্য হইতেও বেশি আলোকিত রশ্মিচ্ছটা দিব্য লোককে আলোকিত করে । রোগ, শোক জরা ব্যধি কিছুই নেই ভগবানের সেই দিব্য লোকে ।
গীতার এই পঞ্চদশ অধ্যায় ভগবান তার দিব্য লোক সম্বন্ধে আমাদেরকে বোঝাচ্ছেন যাতে আমরা তার ভজনা করার মাধ্যমে সেই লোকে পৌছাতে পারি । সেখানে কেই কথা বলে না সবাই গানের সুরে বলে । সে দেশে কেউ হাটে না সবাই নৃত্য করতে করতে পথ চলে । সকল কিছুই দিব্যাতি দিব্য আনন্দময় । কেউ বলতে পারেন না হেটে নৃত্য করে কেমন করে । দেখবেন যদি কেউ অনেক আনন্দে থাকে তখন সে কিন্তু নিজের অজান্তেই নৃত্য করে । মনে করেন আপনি খেলা দেখিতেছেন এক ওবারে ছয় রান লাগে । শেষ বলের আগের বলে গিয়ে হঠাৎ একটা ছক্কা হয়ে গেল । কখন সেই দল যারা যারা সাপোর্ট করতো তারা কিন্তু সবাই আনন্দে ছক্কা ছক্কা বলে তালে তালে অল্প হলেও নৃত্য করে । এর মানে হলো মানুষ তখনই নৃত্য করে যখন সে আনন্দে থাকে । সেই কথাই বলা হয়েছে গীতায় যে আমার লোকে এতটাই আনন্দ সবাই গান করে, হাটে না নৃত্য করে । gita in bangla
একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভগবান কৃষ্ণ গীতা ১৫ অধ্যায় এ বলেছেন । ক্ষর এবং অক্ষর এই দুই ধরনের পুরুষ রয়েছে এই জগতে । যে সমস্ত জীবের বিনাশ হয় তাদেরকে বলা হয় ক্ষর এবং যাদের বিনাশ হয় । নিত্যধাম যাহারা লাভ করিয়াছেন তাহাদের বলা হয় অক্ষর । এই দুই ধরনের পুরুষ ইহ জগতে বিদ্যমান । কিন্তু আরেক পুরুষ রয়েছে যিনি ক্ষর এবং অক্ষরের সৃষ্টিকর্তা । তিনি হলেন পরম পুরুষ । ক্ষর পুরুষ গন সেই পুরুষকে জানার মাধ্যমে অক্ষরত্ব লাভ করিতে সমর্থ হয় । জীবের এক এক জনের ভাব অথবা তার আরাধনা অনুযায়ী সেই লোক প্রাপ্ত হয় । ইতিমধ্যেই কৃষ্ণ ভগবান আলোচনা করেছেন গীতায় – কেউ তাকে জ্ঞানের মাধ্যমে ভজনা করেন । কেউবা তাকে নির্বিশেষ ব্রহ্মজ্ঞানে ধ্যান করার মাধ্যমে তাহার উপাসনা করেন । আবার কেউ তাকে ভালোবেসে তার উপাসনা করেন । যদিও ভগবানের সকল উপাসনাকারীরা অন্তিমে তাকেই প্রাপ্ত হইবে । কিন্তু যে যে ভাবে তাকে উপাসনা করবেন সে সেই লোক প্রাপ্ত হবেন । যারা তাকে সাংখ্য যোগে মাধ্যমে উপাসনা করবেন । তারা নিবিশেষ ব্রহ্মে লীন হবেন । চিন্ময় জগতের সবথেকে নিচের লোক হলো এই ব্রহ্মজ্যোতি । সাংখ্য যোগী এবং নির্বিশেষ ব্রহ্ম উপাসকেরা সেই লোকে পৌঁছাবে । কিন্তু যারা তাকে ভালবাসবে তারা ভগবানের সাথে দিব্য আনন্দে বাস করবে । সেখানে ভগবান তাদের সাথে লীলা করবেন । এই জন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ যোগ হলো ভগবানকে ভালোবাসা অথবা ভক্তিযোগ । যা ভগবান শ্রীমদ্ভগবদ গীতা দ্বাদশ অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন । Bhagavad gita
Read More: গীতা ষোড়শ অধ্যায়
শেয়ার করুন
Post Tags:
গীতা পঞ্চদশ অধ্যায়, গীতা ১৫ অধ্যায়, Bhagavad gita, ভাগবত গীতা, গীতা অধ্যায়, বাংলা গীতা পাঠ, gita in bangla, গীতার পঞ্চদশ অধ্যায়