গীতা ত্রয়োদশ অধ্যায় – প্রকৃতি পুরুষ বিবেকযোগ গীতা অধ্যায় পাঠ । Gita in bangla Capter 13

অর্জুনকে ভগবান জ্ঞান দান করতে করতে গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায় এ এসে ক্ষেত্র এবং ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে জ্ঞান দিচ্ছেন । গীতার এই অধ্যায়ের শুরুতেই অর্জুন ভগবানের কাছে জানতে চাইলেন প্রভু জ্ঞান-জ্ঞেয়, পুরুষ, প্রকৃতি এবং ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে আমাকে জ্ঞান দান করো । তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এই প্রকৃতি পুরুষ ক্ষেত্র ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে জ্ঞান দিচ্ছেন । তৃতীয় শ্লোকে গিয়ে ভগবান বললেন আমাদের শরীর হলো ক্ষেত্র । আর যে ব্যক্তি এই শরীর সম্বন্ধে জানিয়াছেন তাকে বলা হয় ক্ষেত্রজ্ঞ । তবে অর্জুন আমিই কিন্তু সমস্ত ক্ষত্রের ক্ষেত্রজ্ঞ । যে সমস্ত ব্যক্তিগন এই ক্ষেত্রজ্ঞ এবং ক্ষত্রের পার্থক্য যথার্থভাবে জেনেছেন এবং এই জগতের মায়িক বন্ধন হইতে মুক্তি লাভ করা সম্বন্ধে যিনি জানেন তিনিই এই জগত হতে মুক্ত হতে পারেন ।

এখন অনেকেই বলতে পারেন যারা ডাক্তার তারাও তো আমাদের শরীর সম্বন্ধে জানেন । সুতরাং সে ক্ষেত্রে বলতে গেলে তাদের ক্ষেত্র সম্বন্ধে জ্ঞান রয়েছে । কিন্তু গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায়ের এই ক্ষেত্রজ্ঞ মানে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের জ্ঞানের কথা বলা হয় নি । ভগবান এখানে বলতে চেয়েছেন আমাদের জানতে হবে শরীর এবং আত্মার পার্থক্য সম্বন্ধে । যারা শরীর এবং আত্মার পার্থক্য যথাযথভাবে জানেন তারাই ক্ষেত্র সম্বন্ধে জানিয়াছেন । আর সেই আত্মা এবং পরমাত্মার সম্বন্ধে যিনি জানেন তিনি ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে জানেন ।

গীতার এই অধ্যায়ে প্রকৃতি সম্বন্ধে বলা হয়েছে । এই প্রকৃতিই হলো মায়াদেবী দুর্গা । ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই জগতে কোন জীব সৃষ্টি করার পূর্বে প্রথমে মায়া দেবীর গর্ভে প্রেরণ করেন । যারা পরে সেই মায়াদেবী আমাদের এই জগতে সৃষ্টি করেন । এই জগতকেই ভগবান তার বহিরঙ্গা শক্তি মায়ার দ্বারা পরিচালনা করেন । যদিও আমরা বলতে পারি এই জগতকে যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই ব্রহ্মাই তো জগতের পরিচালনা করেন । আবার ভগবান বিষ্ণু হলেন পালন কর্তা তিনিই তো জগতকে পালন করেন । কিন্তু ভগবান যে শক্তির মাধ্যমে এই জগতকে পরিচালনা করেন তিনিই হলেন মা দুর্গা বা তার বহিরঙ্গ শক্তি মায়ার মাধ্যমে । ব্রহ্মাকে পর্যন্ত মায়া দেবী পরিচালনা করেন । জগতের সমস্ত জীব মায়ার দ্বারা পরিচালিত । আর ভগবানের এই মায়াকেই বলা হয় প্রকৃতি । আর আমরা এই জগতে সমস্ত জীব প্রকৃতির অংশ হওয়ায় আমরাও প্রকৃতি । Gita in bangla

অর্জুন কিন্তু জানতেন গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায়ে এসে যে প্রকৃত পুরুষ কে সমস্ত জগতের । কিন্তু তিনি তারপরেও আমাদের জন্য ভগবানকে প্রশ্ন করলেন প্রভু পুরুষ কে ? আসলে এই অনন্ত কোটি ব্রহ্মাণ্ডের পুরুষ একজনই । আর আমরা সবাই প্রকৃতি । তাই একবার পরম বৈষ্ণবী মীরাবাঈ যখন বৃন্দাবনে রূপ গোস্বামীর দর্শন করার জন্য গিয়েছিলেন তখন রূপ গোস্বামী তার শিষ্যদের মাধ্যমে মীরাবাঈকে বলেছিল আমি কোন প্রকৃতি বা নারীর সাথে দর্শন করি না । তখন মীরাবাঈ রূপ গোস্বামীকে উত্তর দিয়েছিল বৃন্দাবনে আমিতো জানি পুরুষ একজনই । এখানে আবার পুরুষ আসলো কোথা থেকে যে প্রকৃতি হয়ে আরেক প্রকৃতির সাথে দেখা করবে না । একই কথা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শ্রীমদ্ভগবদ গীতায় ত্রয়োদশ অধ্যায়ে বলেছেন পুরুষ একজনই আর এই জগতের সবাই প্রকৃতি । আর যিনি প্রকৃতি পুরুষ ক্ষেত্র এবং ক্ষেত্রজ্ঞ সম্বন্ধে জানেন তিনিই এই জগত হতে মুক্তি লাভের প্রকৃত অধিকারী । bhagavad gita bangla

শেয়ার করুন

Facebook
Twitter
WhatsApp
Telegram
Post Tags:

গীতা ত্রয়োদশ অধ্যায়, গীতা অধ্যায় পাঠ, Gita in bangla, শ্রী মদ্ভাগবত গীতা, ভাগবত গীতা, bhagavad gita bangla, গীতার ত্রয়োদশ অধ্যায়, যথার্থ গীতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!