আম ফল এমন একটি খাবার যা সব ধরনের মানুষই পছন্দ করে । তা যদি সুস্বাদু রসালো পাকা আম হয় তাহলে তো কোনো কথাই নাই । হ্যাঁ অনেকের পছন্দ না হতেও পারে এই রসালো পাকা আম । আমার কিন্তু যতো ধরনের ফল রয়েছে তার মধ্যে সবথেকে প্রিয় হলো সুস্বাদু রসালো পাকা আম । এমন মনে হয় যদি পাকা আম থাকে তাহলে অন্য কোনো খাবার না হলেও চলবে । সে যাই হোক অনেকে আবার কিন্তু পাকা আম অপছন্দও করেন । সবার আপন আপন রুচি রয়েছে । আমি পছন্দ করবো বলে সবাই আম পছন্দ করবে এমন নয় । তবে প্রত্যেক ফলের কিন্তু ভালো খারাপ দুটি গুনই রয়েছে । ঠিক তেমনি রসালো পাকা আম এর ক্ষেত্রেও কিন্তু ভালো এবং খারাপ গুন রয়েছে । আমের মধ্যে যেরকম রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ঠিক তেমনি রয়েছে এর খারাপ দিক । আজকে এই পোস্টে আমরা আমের বিশেষ বিশেষ কিছু ভালো এবং খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করব ।
সূচীপত্রঃ
আমের উপকারিতা
তাহলে যেনে নেওয়া যাক পাক আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে । প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন এ পাওয়া যায় এই পাকা আমে । আমাদের শরীরের ত্বককে সুস্থ রাখার জন্য কোলাজেন প্রোটিন তৈরী করে ভিটামিন সি । আমাদের ত্বকের ব্রণের সমস্যা এবং বলিরেখা দূর করে থাকে এই কোলাজেন প্রোটিন । আবার লোক মুখে শোনা যায় পাকা আম খেলে নাকি বেশি ঘুম হয় যদিও এই কথার কোনো ভিত্তি নেই । এছাড়াও এই পাকা আম আমাদের চুলের সমস্যাও ভালো করে থাকে ।
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
প্রতিদিন ৯০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি দরকার পরে আমাদের সুস্থ সবল শরীরের জন্য । প্রায় ৩৬.৪ মিলিগ্রাম সেই দরকারি ভিটামিন সি রয়েছে একটি ১০০ গ্রাম সলিট পাকা আমের মধ্যে । আর এই ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য বড় উৎস কার্য করে । মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে এই ভিটামিন সি । অতএব পাকা আম আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে ।
২. চোখ ভালো রাখতে পাকা আম
৭০০ আই সি ইউ ভিটামিন গ্রহণ করা প্রয়োজন প্রতিদিন একজন সুস্থ সবল মানুষকে । এটা আমাদের প্রায় সকলেরই জানা আছে যে ভিটামিনের অভাবে রাত কানা রোগ হয় । আর ১০% ভিটামিনের অভাব পূরণ হয়ে থাকে প্রতিদিন আম খাওয়ার ফলে । এছাড়াও সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি থেকে আমাদের চক্ষুকে রক্ষা করার জন্য প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে পাকা আমে । এজন্য প্রতিদিন পাকা আম খাওয়া উচিৎ আমাদের চক্ষুকে ভালো রাখার জন্য ।
৩. চিনির পরিবর্তে পাকা আম
অবশ্যই আপনি পাকা আম খেতে পারেন চিনির পরিবর্তে । যেহেতু পাকা আম অনেক মিষ্টি তাই সহজেই এই পাকা আমের মাধ্যমে চিনির অভাব পূরণ করা যায় । আর সরাসরি চিনি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর । আবার যে ধরনের খাবারে চিনি ব্যবহার করা হয় সেই খাবার গুলোতে ব্যবহার করতে পারেন এই পাকা আম ।
৪. রক্ত পরিষ্কার করতে আম
মানব শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে পাকা আমে রয়েছে ম্যালিক এসিড, টারটারিক এসিড এবং সাইট্রিক এসিড । এই সমস্ত এসিড আমাদের মানব শরীরের রক্ত পরিষ্কার করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । এজন্য রক্ত পরিষ্কার করতেও আপনি পাকা আম খেতে পারেন ।
৫. ভিটামিনের অভাব পূরণে আম
প্রচুর খনিজ উপাদান এবং ভিটামিন রয়েছে এই পাকা আমে । সরাসরি পাকা আমে ভিটামিন না পাওয়া গেলেও এই পাকা আমের মধ্যে থাকা বিটা-ক্যারোটিন সাধারণভাবে আমাদের শীরের ভিটামিনের কার্য করে । এছাড়াও পাকা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, পটাশিয়াম এবং ভিটামিন সি । আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সবল রাখতে সাহায্য করে থাকে এসকল উপাদানগুলো ।
৬. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে পাকা আম
আমাদের ত্বক উজ্জ্বল করার জন্য আমরা কতো কিছু না করে থাকি । কতো ধরনের ক্রিম ব্যবহার করি শুধুমাত্র ত্বককে উজ্জ্বল করার জন্য । কিন্তু প্রাকৃতিক উপায় ব্যবহার করে ত্বককে উজ্জ্বল করার মতো আর কিছু হয় না । তাই আপনি যদি প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বক উজ্জ্বল করতে চান তাহলে রসালো পাকা আম খেতে পারেন । কারন ভিটামিন সি পাওয়া যায় পাকা আমের মধ্যে যা আমাদের শরীরের লোমকূপকে পরিষ্কার রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

Read More: জানুন অজ শব্দের অর্থ
আমের অপকারিতা
১. ডায়রিয়া হয় পাকা আমে
পাকা আমে অধিক পরিমাণে ফাইবার এবং আঁশ থাকায় পাতলা পায়খানা অথবা ডাইরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বেশি পাকা আম খেলে । অতএব প্রতিদিন উচিৎ পরিমাণ মতো দুটি অথবা একটি করে পাকা আম খাওয়া । এরকম পরিমাণ মতো আম খেলে ডাইরিয়া বা পাতলা পায়খানা হওয়ার সম্ভাবনা নেই ।
২. গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধিতে আম
পাকা আম খাওয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে ভালো । কিন্তু অতিরিক্ত মাত্রায় এই পাকা আম খাওয়া ঠিক না । কারন আমাদের শরীরের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়তে পারে পাকা আমে । কারন এই পাকা আমে রয়েছে উচ্চমাত্রায় চিনি আর এই চিনি গ্লুকোজের বিশেষ একটি উৎস । আমাদের যদি রক্তে গ্লুকজের মাত্রা বৃদ্ধি পায় তাহলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । অতএব আমাদের শরীরের জন্য বেশি পরিমাণে পাকা আম খাওয়া ভালো না । আর এজন্যই ডাক্তাররা ডায়াবেটিস রোগীদেরকে পাকা আমা খেতে বারণ করে ।
৩. ওজন বৃদ্ধিতে পাকা আম
শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে এই পাকা আম । কারন অধিক মাত্রায় শর্করা রয়েছে এই পাকা আমে । আর এই শর্করা আমাদের শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে থাকে । তাই এই পাকা আমা খাওয়া উচিৎ নয় মোটা ব্যক্তির ।
৪. হাঁপানি বাড়ায় পাকা আম
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা পাকা আম খেতে নিষেধ করে থাকেন যাদের হাঁপানি বা অ্যাজমা রয়েছে । কারন অনেক ব্যবসায়ীরা কাঁচা আম পাকানোর জন্য বিষাক্ত একপ্রকার ক্যালসিয়াম কার্বাইড নামক ক্যামিক্যাল মিশিয়ে থাকেন, আর এই ক্যামিক্যাল হাঁপানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অ্যালার্জিও বৃদ্ধি করে থাকে । অতএব অ্যালার্জি এবং হাঁপানি রোগী যারা তারা পাকা আম খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ ।
৫. পেটের সমস্যা বাড়ায় আম
পেটের সমস্যার কারন হতে পারে এই পাকা আম এটাই বিশেষজ্ঞদের মত । কারন এই পাকা আমে গাঁজনযোগ্য কার্বোহাইড্রেট পাচনতন্ত্রকে ক্ষতি করে এবং বাওয়েল সিন্ড্রোম বাড়াতে পারে ।
৬. কিডনি রোগীর জন্য ক্ষতিকর পাকা আম
পাকা আম খেতে নিষেধ করে থাকেন ডাক্তাররা অনেক সময় কিডনি রোগীদের । আম পাকানো হয় ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে যা কিডনি রোগীদের অনেক ক্ষতি ডেকে আনে । এজন্য যারা কিডনি রোগী রয়েছেন তারা অবশ্যই পাকা আম খাওয়ার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন ।

পাকা আম খাওয়ার নিয়ম
* পাকা আম আমাদের জুস বানিয়ে খাওয়া উচিৎ নয় । কারন জুস বানিয়ে খেলে পাকা আমের পুষ্টিগুণ এবং ফাইবার অনেক কমে যায় । এজন্য আমাদের উচিৎ পাকা আম জুস না করে টুকরো করে খাওয়া ।
* পাকা আমা বিকালে এবং সকালে খাওয়া উচিৎ আমাদের । পুরো একবারে খেলে আমাদের খাবারের চাহিদা মেটায় এই পাকা আম ।
* আমাদের শরীরের ওজন বাড়ায় এই পাকা আম । শরীরের ওজন যদি আপনার কমানোর ইচ্ছা থাকে তাহলে পরিমিত আম খাবেন । অতিরিক্ত আম খেলে শরীরের ওজন বাড়ে ।
* পাকা আম নিজেই পরিপূর্ণ খাবারের চাহিদা পূরণ করে থাকে এবং পেট ভরায় । তাই আম রাতে অথবা দুপুরে খাওয়া উচিৎ না ।
* যাদের ডাইবেটিসের মাত্রা বেশি তারা পাকা আম পরিমাণ মতো খাবেন । কারন পাকা আমে চিনি পরিমাণ বেশি থাকে ।
উপসংহার আমের উপকারিতা ও অপকারিতা
তবে যাই হোক না কেন আমার কিন্তু রসালো পাকা আম অনেক প্রিয় । এক কথায় বলা যায় আম্র প্রেমী । তবে পছন্দ হলেও আমাদের উচিৎ পরিমাণ মতো পাকা আম খাওয়া । কোনো কিছুই বেশি ভালো না । তাহলে পাকা আমের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে কেন । তাই মানব শরীরের জন্য পাকা আম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । কিন্তু আমাদের তা পরিমাণ মতো খেতে হবে যাতে শরীরের জন্য এই পাকা আম ক্ষতির কারন না হয় । আশা করি পাকা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা এই পোস্টটি আপনার উপকারে আসবে ।
ধন্যবাদ ।
Read More: রাধা কৃষ্ণ কেন বিয়ে করে নি?
শেয়ার করুন
Post Tags:
পাকা আম, পাকা আম খাওয়ার নিয়ম, পাকা আমের উপকারিতা ও অপকারিতা, পাকা আমের অপকারিতা, পাকা আমের উপকারিতা, পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা, পাকা আম খাওয়ার অপকারিতা, কাঁচা আমের উপকারিতা, কাঁচা আমের অপকারিতা, পাকা আমে কোন ভিটামিন থাকে, পাকা আম বেশি খেলে কি হয়